আপনার কি মনে হয় আপনার মধ্যে হাই কোয়ালিটি ছবি তোলার কৌশল গুলো রয়েছে বা আপনি কি ছবি তুলতে অনেক পছন্দ করেন ? তাহলে একজন Shutterstock Contributor হিসেবে অনলাইনে প্রচুর টাকা ইনকাম করার সুযোগ আপনি পেতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমি অনলাইনে শাটারস্টকের মাধ্যমে ছবি বিক্রি করে টাকা আয় করার বিষয়টা নিয়েই কথাটাই বলবো।
আসলে, একজন শাটারস্টক কন্ট্রিবিউটর হিসেবে আপলোড করা আমাদের ভিডিও বা ছবিগুলো যখনই কোনো গ্রাহক কিনে থাকেন, তখন শাটারস্টক তার সেই বিক্রির থেকে ১৫% থেকে ৪০% কমিশন আমাদের দিয়ে দেয়।
Shutterstock-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা মতে, গত ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের পেআউট তারা করেছেন।
এখন, প্রতিটি ছবি বা ভিডিও বিক্রি হওয়ার পর আপনাকে ঠিক কত টাকা কমিশন দেওয়া হবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার কারেন্ট কন্ট্রিবিউটর লেভেল এর উপর। অর্থাৎ, আপনার আপলোড করা ছবিগুলো ঠিক যত অধিক পরিমানে গ্রাহকেরা কিনবেন এবং ডাউনলোড করবেন, ততটাই বাড়তে থাকবে আপনার লেভেল এবং সেই হারে কমিশনও বেশি পরিমানে পাবেন।
আপনি কি একজন অনেক ভালো ফটোগ্রাফার? ছবি তোলার নিজের এই দক্ষতা এবং কৌশলটিকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে কিছু অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করার সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইছেননা? তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং জেনেনিন কিভাবে আপনিও Shutterstock থেকে আয় করবেন।
Table of Contents
কিভাবে Shutterstock থেকে আয় করবেন?
আমার হিসেবে, কোনো ধরণের ডিপোজিট ছাড়া অনলাইনে ছবি বিক্রি করে আয় করার কথা আসলে, Shutterstock একটি অনেক দারুন ও কার্যকর ওয়েবসাইট হিসেবে সবার উপরে নাম থাকবে ।
এছাড়া, এই সাইটটি ব্যবহার করে অনেকেই কিন্তু নিজের মোবাইল দিয়েই ফটোগ্রাফি করে ইনকাম করছেন। তবে, এক্ষেত্রে আপনাকে Shutterstock Contributor কিভাবে হতে হয় সেটা আগেই জেনে নিতে হবে।
Shutterstock থেকে ইনকাম করার জন্য সব থেকে আগে আপনাকে নিজের একটি ফ্রি Shutterstock account তৈরি করে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনাকে নিজের ইমেইল আইডি, নাম, ঠিকানা, এই ধরণের তথ্যগুলো দিয়ে দিতে হয়। মনে রাখবেন, শাটারস্টকে একাউন্ট তৈরি করার পর সরাসরি আপনার ছবি গুলো কিন্তু বিক্রি করা হবেনা।
প্রথমে আপনাকে আপনার নিজের তোলা ছবির কালেকশন থেকে ১০টি সেরা ছবি তাদেরকে পাঠাতে হবে। এবার, আপনার ছবিগুলো Shutterstock ভেরিফাই করবে। যদি আপনার পাঠানো ছবির কোয়ালিটি তাদের পছন্দ হয়, তাহলে তারা আপনার একাউন্ট এপ্রুভ করে দিবে।
একবার আপনার একাউন্ট এপ্রুভ করা হয়ে গেলে আপনি নিজের পছন্দমতো যেকোনো একটি বা একাধিক বিষয়/টপিক সিলেক্ট করে ছবি তুলতে এবং নিজের শাটারস্টক একাউন্টে আপলোড করে সেগুলোকে বিক্রি করতে দিতে পারবেন। এটাকে, আপনি নিজের অনলাইন ব্যবসা হিসেবে নিয়েও কাজ করতে পারবেন।
Shutterstock Contributor হয়ে কিভাবে টাকা ইনকাম করবেন?
আমি উপরে আগেই বলেছি, যদি আপনি হাই কোয়ালিটি ছবি গুলো তুলতে সক্ষম বা ছবি তোলার কৌশল গুলো আপনার জানা আছে, সেক্ষেত্রে আপনি নিজের মোবাইল দিয়েও ছবি তুলে Shutterstock-এর মধ্যে আপলোড করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, শুরুতে Shutterstock-এ ছবি বিক্রি করাটা আপনার জন্য একটি চ্যালেন্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়াতেই পারে। তবে, অনলাইনে এই ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করাটা মোটেও অসম্ভব কিছু না।
এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত ভালো ভালো ছবি তুলতে হবে এবং ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ছবি আপলোড করতে থাকতে হবে।
চলুন এখন জেনে নেয়া যাক shutterstock এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে চাইলে কোন কোন ধাপগুলো অনুসরণ করবেন।
১. নতুন একাউন্ট তৈরি:
প্রথমেই একটি Shutterstock একাউন্ট তৈরি করুন। এক্ষেত্রে আপনাকে submit.shutterstock.com-এর ওয়েবসাইট এর ঢুকে Get Started-এর বাটনে click করতে হবে। এবার, আপনার নাম, ইমেইল আইডি এবং একটি নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজের একাউন্টটি তৈরি করে নিন।
২. মিনিমাম ২০টি ছবি রেডি রাখুন :
উপরে আমি আপনাদের আগেই বলেছিলাম যে, Shutterstock থেকে ইনকাম হওয়ার আগে আপনাকে শুরুতে ১০টা ছবি তাদেরকে পাঠাতে হবে। যাতে ছবি গুলো দেখে ছবির কোয়ালিটি এবং আপনার ছবি তোলার কৌশল এর বিষয়ে শাটারস্টক বুঝতে পারেন। তাই, কম করে ২০টি হাই কোয়ালিটি (high-resolution images) ছবি নিজের কাছে রেডি রাখুন।
৩. একাউন্ট এপ্রুভাল:
যদি আপনার আপলোড করা ছবি গুলো Shutterstock-দ্বারা পছন্দ করা হয় এবং আপনার একাউন্টটি এপ্রুভ করে দেওয়া হয়, এবার আপনি আপনার শাটারস্টক একাউন্টে নিয়মিত ছবি গুলো আপলোড করে সেগুলোকে বিক্রি করতে পারবেন।
Note: Shutterstock-এ ছবি আপলোড করার সময় আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি ছবির সাইজ যাতে 4 MP (megapixels) বা তার থেকে বেশি হয়। এছাড়া, ছবিগুলো যাতে একেবারে হাই কোয়ালিটিতে সেট করা থাকে সেই বিষয়েও ধ্যান রাখতে হবে আপনাকে।
৪. ছবির একটি বড় পোর্টফোলিও:
মনে রাখবেন, শাটারস্টক থেকে নিয়মিত প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য আপনাকে ছবি এবং ভিডিওর (যদি ভিডিও আপলোড করে থাকেন) একটি অনেক বড় পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে।
কারণ, আপনার Shutterstock portfolio-এ যত অধিক পরিমানে ছবি থাকবে, গ্রাহকদের আপনার ছবিগুলোর মধ্যে থেকে যেকোনো একটি হলেও পছন্দ করার ততটাই অধিক সুযোগ বাড়বে।
আপনার ছবির লাইব্রেরিতে যত অধিক পরিমানে ছবি আপলোড করা থাকবে আপনার ইনকামের জন্য সেটা ততটাই অধিক কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। তাই, হাজার হাজার হাই কোয়ালিটির ছবি নিজের পোর্টফোলিওতে যুক্ত করুন।
৫. কীওয়ার্ড এবং ডেসক্রিপশন:
Shutterstock-এ ছবি আপলোড করার সময় ছবিগুলোতে ছবির সাথে রিলেটেড সঠিক কীওয়ার্ড এবং ছবির বিস্তারিত বিবরণ (ডেসক্রিপশন) যুক্ত করার বিষয়টা কিন্তু ভুলবেননা। কেননা, ছবির মধ্যে ব্যবহার করা কীওয়ার্ড এবং ডেসক্রিপশন এর সাহায্যেই সম্ভাব্য ক্রেতারা ছবিটিকে Shutterstock-এর platform-এ সহজে খুঁজে পাবেন।
Shutterstock-এর algorithm-টি হাই কোয়ালিটি এবং প্রাসঙ্গিক ছবি বা কনটেন্ট গুলোকে তার সার্চ রেসাল্টের দেখানোর উদেশ্যে ডিজাইন করা হয়েছে। তাই, সব সময় ইউনিক, আকর্ষক এবং মজার ছবি গুলো তুলার চেষ্টায় থাকবেন এবং পাশাপাশি ছবি আপলোড করার সময় ছবির সাথে জড়িত keywords এবং description অবশই ব্যবহার করবেন।
৬. জনপ্রিয় ট্রেন্ড গুলো বুঝুন:
নিঃসন্দেহে: অনলাইনে স্টক ফটো বিক্রি করে টাকা আয় করার সব থেকে জনপ্রিয় উপায় গুলোর মধ্যে একটি হলো Shutterstock।
তবে, এখান থেকে নিয়মিত ইনকাম করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন জনপ্রিয় এবং পপুলার ট্রেন্ড গুলোর বিষয়ে খানিকটা রিসার্চ করতে হবে। লোকেরা কোন বিষয়ে থাকা অধিক ছবিগুলো কিনে নিচ্ছেন, কি ধরণের ছবি গ্রাহকেরা অধিক পছন্দ করেন, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাকে আপনার ধারণা থাকতে হবে।
এতে, ছবি আপলোড করার আগেই আপনি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকছেন যে আপনার আপলোড করা ছবিটির বর্তমানে প্রচুর চাহিদা আছে এবং ছবিগুলো ঘন ঘন বিক্রি হওয়ার সুযোগও অনেক বাড়বে।
৭. কিভাবে টাকা পাবেন:
একজন Shutterstock contributor হিসেবে, আপনার ছবির পোর্টফোলিওর থেকে প্রতিবার বিক্রি হওয়া প্রতিটি ছবির জন্য শাটারস্টক আপনাকে কিছু টাকা কমিশন হিসেবে দিবে। তবে এখানে ৬টি আলাদা আলাদা লেভেল হিসেবে আলাদা আলাদা পরিমানের কমিশন (১৫% থেকে ৪০%) কন্ট্রিবিউটারদের দেওয়া হয়ে থাকে।
সোজা ভাবে বললে, যত বেশি গ্রাহক আপনার পোর্টফোলিও থেকে ছবি গুলো কিনে নিবেন ততটাই তাড়াতাড়ি আপনার লেভেল ও বাড়তে থাকবে এবং পাশাপাশি উচ্চ কমিশন স্ট্রাকচার আপনাকে অফার করা হবে।
Shutterstock-এ ছবি বিক্রি করে ইনকাম করা আপনার টাকা গুলোকে আপনি Payoneer, Paypal, বা Skrill-এর মাধ্যমে তুলতে পারবেন। Shutterstock, প্রতি মাসের 7th থেকে 15th এর মধ্যে নিজে নিজেই আপনার কাছে টাকা পাঠিয়ে দিবে। মনে রাখবেন, Payment History-তে গিয়ে পেমেন্ট রিলেটেড যাবতীয় তথ্যগুলো আপনি দেখেনিতে পারবেন।
Shutterstock-এ কি AI দিয়ে তৈরি ছবি বিক্রি করা যাবে?
Shutterstock-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এর মধ্যে দেওয়া মতে আপনি একজন contributor হিসেবে Shutterstock-এ কোনো ধরণের AI দিয়ে তৈরি ছবি আপলোড করে সেগুলোকে লাইসেন্স করাতে পারবেননা।
সোজা ভাবে বললে, AI generated images আপনি বিক্রি করতে পারবেননা। আপনার দ্বারা আপলোড করা প্রতিটি ইমেজ আপনার নিজের হাত দিয়ে তোলা অথবা তৈরি করা হতে হবে এবং ছবিগুলোকে তাদের আসল photographer/artist দ্বারা শাটারস্টকে আপলোড করতে হবে।
শাটারস্টক থেকে কত টাকা আয় করা যায়?
শাটারস্টকে ছবি আপলোড বা বিক্রি করে আপনি কত টাকা ইনকাম করবেন সেটা নানান বিষয় গুলোর উপর নির্ভর করে থাকে। যেমন ধরুন, আপনার ছবির পোর্টফোলিওতে কতগুলো ছবি আছে এবং সেগুলো কি পরিমানে ডাউনলোড করা হচ্ছে।
আমি আগেও বলেছি, আপনার ছবি গুলো যত অধিক পরিমানে ডাউনলোড করা হবে, Shutterstock থেকে আয় ততটাই অধিক হবে। এছাড়া, Shutterstock-এর মধ্যে আলাদা আলাদা লেভেল গুলোর উপর ভিত্তি করে কমিশন রেট প্রদান করা হয়। আপনাকে কোন লেভেল হিসেবে কতটা কমিশন দেওয়া হচ্ছে, এক্ষেত্রে সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবে সোজা ভাবে সাধারণ রুল অফ থাম্ব হিসেবে বলতে হলে, Shutterstock-এ ডাউনলোড হওয়া আপনার প্রতি ছবিতে আপনি মোটামোটি $0.25 থেকে $120 আয় করে নিতে পারবেন।
সুতরাং আপনি যদি বেশি ছবি আপলোড করেন, প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করা কোনো ব্যাপারই না , এমনকি এর বেশিও সম্ভব ধৈর্য ধরে কাজ করতে থাকলে।
মনে রাখবেন, অনলাইনে টাকা ইনকাম করার এই ওয়েবসাইট থেকে অধিক টাকা আয় করার ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত হাই কোয়ালিটি ছবি তুলতে এবং আপলোড করতে থাকতে হবে।
শেষ কথা
Shutterstock থেকে আপনি অবশই নিয়মিত প্যাসিভ ইনকাম এর একটি লাভজনক রাস্তা তৈরি করে নিতে পারবেন। তবে, মনে রাখা দরকার যে এখন থেকে ইনকাম করতে হলে আপনাকে নিয়মিত হাই কোয়ালিটি ছবি গুলো আপলোড করতে থাকতে হবে।
কারণ, আপনার প্রত্যেকটি ছবি কিন্তু প্রত্যেকের কাজে লাগবেনা। তাই, যত বেশি ছবি আপনার পোর্টফোলিওতে থাকবে, কোনো না কোনো ছবি বিক্রি হওয়ার সুযোগ ততটাই বেশি বাড়বে।
এছাড়া, আপনার একটি চাহিদাপূর্ণ বিষয় (demandable niche) টার্গেট করে ছবি তোলা উচিত যেগুলো প্রচুর পরিমানে ডাউনলোড করা হয়ে থাকে। যেমন, টেকনলজি, নেচার, জীব-জন্তু, বিল্ডিং, ইত্যাদি।
পরিশেষে বলবো, একবার চেষ্টা করেই দেখুন, যদি ছবি তোলা আপনার প্যাশন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে নিয়মিত ছবি তুলতে এবং আপলোড করতে আপনার সমস্যা হবেনা।
FAQ: Shutterstock থেকে টাকা আয়:
১. Shutterstock কি?
Shutterstock, হলো একটি অনেক জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত stock photography website, যেখান থেকে যে কেউ টাকা দিয়ে photos, videos, music, illustrations, ইত্যাদি কিনে সেগুলোকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
২. কিভাবে শাটারস্টকে ছবি জমা দিতে হয়?
Shutterstock এ ছবি আপলোড করার জন্য আপনাকে একটি ফ্রি শাটারস্টক একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। একাউন্ট তৈরি হওয়ার পর আপনি নিজের ছবির পোর্টফোলিওতে একে একে নতুন নতুন ছবি আপলোড করতে পারবেন।
৩. শাটারস্টকে কি ভিডিও বিক্রি করা যায়?
হ্যা, Shutterstock এর মাধ্যমে আপনারা ছবির পাশাপাশি footage clips (video), illustrations এবং vectors-ও বিক্রি করতে পারবেন।
৪. শাটারস্টকে ছবি বিক্রি করতে কি খরচ হয়?
শাটারস্টকে ছবি বিক্রি করার জন্য আপনাকে কোনো ধরণের টাকা খরচ করতে হবেনা। শাটারস্টক একাউন্ট তৈরি করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ফ্রি এবং এক্ষেত্রে আপনাকে কোনো ধরণের টাকা দিতে হয়না।
৫. অনলাইনে ছবি বিক্রি করার অন্যান্য কি কি ওয়েবসাইট আছে?
Shutterstock ছাড়াও অনলাইনে ছবি বিক্রি কিছু অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করার অন্যান্য নানান ওয়েবসাইট গুলো রয়েছে, যেমন, Alamy, 500px, Getty Images, iStock Photo, Adobe Stock, Foap, এবং আরো আছে।